শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ অপরাহ্ন
মোঃ ইসমাইল হুসাইন কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি, কালের খবর : কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে লালন স্মরণোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা
আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক ফকির লালন শাহের ১৩৪ তম তিরোধান দিবস। সাঁইজির প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভাব প্রদান করে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছেন বাউল, সাধক ও ভক্তরা।
তিরোধান দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে তিন দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। জেলা প্রশাসক শারমিন আখতারের সভাপতিত্বে গতকাল শনিবার রাতে সমাপনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ। আলোচনা সভার পর মুক্তমঞ্চে লালন শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই গান।
এবার লাখো মানুষের মিলন মেলা দেখা গেছে আখড়াবাড়িতে। এত মানুষ গত দুই দশকে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন বাউল, ভক্ত ও আয়োজকেরা।
সরেজমিন জানা গেছে, কান পাতলেই শোনা গেছে লালনের গান। দলে দলে বিভক্তি হয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে গান পরিবেশন করেছেন ভক্তরা। মুক্তমঞ্চে চলে গান। মঞ্চের সামনেই বসে গ্রামীণ মেলা। সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে গতকাল রাত থেকে আখড়াবাড়িতে কমতে শুরু করেছে ভক্তদের ভিড়।
‘পার করো হে দয়াল চাঁদ আমারে, ক্ষম হে অপরাধ আমার, এ ভব কারাগারে। পাপী অধম হে তোমার, যদি না করো পার দয়া প্রকাশ করে…’ সাঁইজির গানে বিদায় বেলায় এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করলেন বাউল আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এখানে অষ্টপ্রহর ভক্তরা প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা ও ভাব বিনিময় করে নিজ গন্তব্যে চলে যান। বিদায় খুব কঠিন ব্যাপার। তাইতো বিদায় বেলা খুব কষ্টের।
‘এই মানুষে আছেরে মন, যাকে বলে মানুষ রতন’ সাঁইজির এমন বাণি জানিয়ে ফকির হৃদয় সাধু বলেন, ফকির লালন সাঁইজির সত্যে সত্যতা হন। আজ সাঁইজির দর্শন ও সত্যতা সবকিছু মিলিয়ে আজ আখড়াবাড়িতে মানুষের যে ঢল নেমে এসেছে, জোয়ার নেমেছে। এই সবই সাঁইজির সত্যতা।’ মানুষ চাই সব সময় সত্য প্রচার করতে। তাইতো সাঁইজি বলে গেছেন, ‘সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন’।
সাধুভক্তরা বলছেন, এবার আগে থেকেই সাধুভক্তরা আখড়াবাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ বাদ্যযন্ত্র ও গানে গানে মুখর হতে থাকে। কথা হয় বগুড়া থেকে আসা লুৎফর রহমান বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কার্তিকের পয়লা দিন ভুলে থাকা যায় না। যেখানেই থাকি, মন আপন মনেই ছুটে আসে। কোনো বাধাই মানে না। সাঁইজির চরণে আশ্রয় নিতে আমাদের আসা।’
১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক কালজয়ী ভাবুক ও শিল্পী লালন সাঁই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে আখড়াবাড়ি চত্বরে তাঁর ভক্ত-অনুসারীরা তাঁদের সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। পরে লালন একাডেমি এ আয়োজনের দায়িত্ব নেয়।